দুনিয়াতে বহু অনিষ্টের কারণ হলো রাগ বা ক্রোধ। মানুষ এ রাগের বশবতী হয়ে অনেক নির্দয় ও অত্যাচারমূলক কাজ করে ফেলে। এ রাগের ফলে মানুষ সম্মানিত হওয়ার পরিবর্তে লজ্জা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। তাই কারো দ্বারা কোনো ক্ষতি বা অন্যায়মূলক কাজ হয়ে গেলেও রাগ না করে ক্ষমা করা বা ধৈর্য ধারণ করা। কারণ রাগ নয় ক্ষমায় রয়েছে মুমিনের সাফল্য।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমা প্রদর্শনে রয়েছে ইসলামের অনেক নির্দেশনা।
আল্লাহ তাআলা মুত্তাকি লোকদের প্রশংসা করে বলেন, ‘যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। (সুরা শুরা : আয়াত ৩৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা রাগ সংবরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককারদেরকে ভালবাসেন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)
রাগ সংবরণকারী ও ক্ষমাকারী ব্যক্তিরাই মুত্তাকি বা তাকওয়ার অধিকারী। এ সব লোকদেরকে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত দান করেন। যা আগের আয়েতে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, ‘‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবমান হও; যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকি তথা আল্লাহ ভিরুদের জন্য।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩)
রাগের পরিবর্তে ক্ষমা করে দেয়াকে সফলতা বলার অন্যতম কারণ হলো, ‘স্বাভাবিক অবস্থায় কাউকে কোনো অন্যায় বা ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেয়া সহজ ব্যাপার। কিন্তু রাগের সময় সামান্য বিষয়ে ক্ষমা করাও কঠিন। প্রিয়নবির উপদেশ হলো এ কঠিন মুহূর্তেও নিজেকে সংবরণ করে ক্ষমা করা।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয়; যে অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়। বরং রাগের সময় যে ব্যক্তি নিজের রাগ সংবরণকারী, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বীর (পুরুষ)।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
রাগের সময় করণীয়
কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাগ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে প্রিয়নবির এ হাদিসটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠাণ্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত ওজু করে নেয়া।’ (বুখারি, মিশকাত)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)
ক্ষমায় সফলতা
ক্ষমা হলো আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকের অনেক জায়গায় প্রিয়নবিকে ক্ষমার ব্যাপারে নসিহত পেশ করেছেন-
আল্লাহ বলেন, ‘আপনি ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৯৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৯)
মানুষের প্রতি ক্ষমা ও দয়ায় রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা। ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা যদি ওদেরকে ক্ষমা (মার্জনা) কর; ওদের দোষ ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর তবে জেনে রেখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৪)
পরিশেষে…
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, রাগ মানুষের আমলকে নষ্ট করে দেয়; অকারণে রাগ করলে মানুষের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রিয়নবির ঘোষণায়, ‘ক্রোধ বা রাগ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয় যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয়। (বয়হাকি, মিশকাত)
সুতরাং ঈমান রক্ষায় ও আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তিতে রাগ থেকে বিরত থেকে ক্ষমার মানসিকতা তৈরি করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর মাফ করে দেয়াই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে এবং পরকালের আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভে রাগ বা ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন। ক্ষমার মানসিকতা পোষণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।